তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও ফজিলত জেনে রাখা জরুরী
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও ফজিলত জেনে রাখা জরুরী কেননা তাহাজ্জুদ নামাজ ইসলামের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নামাজ, যা রাতে আদায় করা হয়। এটি নফল নামাজ হলেও এর ফজিলত অত্যন্ত বিশাল যা আল্লাহ তা’আলা নিজে বান্দাকে দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনকে সফলতা দান করে থাকেন ।
01.তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সূচি:
তাহাজ্জুদ নামাজ সাধারণত রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আদায় করা হয়। ইসলামের শিক্ষায় রাতকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়:
1. প্রথম তৃতীয়াংশ: সন্ধ্যা থেকে রাতের এক তৃতীয়াংশ।2. দ্বিতীয় তৃতীয়াংশ: রাতের মাঝের এক তৃতীয়াংশ।
3. শেষ তৃতীয়াংশ: রাতের শেষ এক তৃতীয়াংশ।
তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের সময় হচ্ছে রাতের শেষ তৃতীয়াংশে। সাধারণত ফজরের আযানের এক থেকে দেড় ঘণ্টা আগে তাহাজ্জুদের সময় হয়।
02.তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত:
1. আল্লাহর সন্তুষ্টি: আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায় হলো তাহাজ্জুদ নামাজ।2. দোয়া কবুল: তাহাজ্জুদের সময় আল্লাহ দোয়া কবুল করেন এবং বান্দার প্রার্থনা শুনেন।
3. গুনাহ মাফ: গুনাহ মাফের অন্যতম উপায় হলো তাহাজ্জুদ নামাজ।
4. নেক আমল বৃদ্ধি: এই নামাজ পড়লে নেক আমল বৃদ্ধি পায়।
5. জান্নাতের উচ্চ স্থান: যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন, তারা জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা লাভ করবেন। হাদিসে বলা হয়েছে, “আমাদের রব (আল্লাহ) প্রতিদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কেউ কি আছে যে আমার কাছে কিছু চাইবে? আমি তাকে তা দেব। কেউ কি আছে যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব।’” (বুখারী, মুসলিম)
03.তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব
তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ইসলামে অত্যন্ত বেশি। কুরআন এবং হাদীসে এ নামাজের বিশেষ উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
"আর রাতের একাংশে তাহাজ্জুদ পড়ুন। এটি আপনার জন্য নফল হিসেবে। সম্ভবত, আপনার রব আপনাকে মহিমান্বিত অবস্থানে পুনরুত্থিত করবেন।" (সূরা আল-ইসরাঃ ৭৯)
তাহাজ্জুদ নামাজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ নামাজগুলোর একটি। আরও বিস্তারিতভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো:
04.তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তবে কয়েকটি সাধারণ নিয়ম অনুসরণ করা যেতে পারে:1. রাকাত সংখ্যা: তাহাজ্জুদ নামাজের কোনো নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যা নেই। তবে সাধারণত ২ রাকাত করে ৮ রাকাত পর্যন্ত পড়া হয়। কেউ চাইলে ১১ রাকাত পর্যন্ত পড়তে পারেন।
2. নিয়ত: তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করতে হবে। নিয়ত করার পর তাকবির দিয়ে নামাজ শুরু করতে হবে।
3. কিরাত: ফাতিহা সূরার পর কুরআনের যেকোনো সূরা বা আয়াত তিলাওয়াত করতে হবে।
4. দোয়া: তাহাজ্জুদ নামাজের পর আল্লাহর কাছে নিজের এবং অন্যদের জন্য দোয়া করা উচিত। এই সময় দোয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য বিশেষ সুযোগ।
05.তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে কিছু হাদীস
1. উচ্চ মর্যাদা: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, "ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট নামাজ হলো রাতের নামাজ।" (মুসলিম)2. গুনাহ মাফ: রাসূল (সা.) বলেছেন, "রাতে নামাজ পড়া মুমিনের গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়।" (তিরমিজি)
3. দোয়া কবুল: রাতে আল্লাহ পৃথিবীর আসমানে নেমে এসে বলেন, "কেউ কি আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে? আমি তাকে তা দেব।" (বুখারি, মুসলিম)
4. আল্লাহর প্রিয়: তাহাজ্জুদ নামাজ আল্লাহর প্রিয় নামাজগুলোর মধ্যে অন্যতম, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বিশেষ সুযোগ।
06. তাহাজ্জুদ নামাজ সর্ম্পকে গুরুত্বপূর্ণ টিপস
1. সময় নির্ধারণ: প্রতিদিনের কাজের শিডিউল অনুযায়ী রাতে তাহাজ্জুদ নামাজের সময় নির্ধারণ করা।2. অ্যালার্ম: ঘুম থেকে ওঠার জন্য অ্যালার্ম ব্যবহার করা।
3. সহজ সূরা: সহজ এবং ছোট সূরা দিয়ে শুরু করা, যাতে নিয়মিততা বজায় রাখা সহজ হয়।4. দোয়া মন্ত্রণা: দোয়া এবং মন্ত্রণার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিজের মনের কথা প্রকাশ করা।
তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য চেষ্টা করা উচিত। এটি আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এবং আমাদের অন্তরে প্রশান্তি আনে।